বানরের অত্যাচারে কি আমরা বরমীবাসী অতিষ্ঠ?

বরমী সোসাইটিঃ "বানরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ আমরা বরমীবাসী" কথাটি বলার আগে একটু বিশ্লেষণ করুন। প্রায় সময় এই কথাটি মানুষের মুখে শুনে থাকি বিশেষ করে যারা বরমীর বানরগুলোর দ্বারা একটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজকে সময় টেডিভিশনের একটি ডকোমেন্টারিতেও তাই লক্ষ্য করলাম। এই কথাটি বলা ভুল আমি তা বলি না, আমি নিজেও গত করোনা কালে আমাদের বাড়িতে বানরের হানা দেয়ার সময় এমনটা ভাবতাম। কিন্তু যখন একটু বিশ্লেষণ করলাম তখন আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা অনেক বড় একটা ভুল বুঝাবুঝির মধ্যে আছি আমাদের অমূল্য সম্পদ এই নিরিহ প্রাণী গুলোর প্রতি।



একটু চিন্তা করুন তো, এই বানর গুলো আমাদের যেটুকু ক্ষতি করেছে তারচেয়ে বেশী কিন্তু দিয়েছে এবং দিয়ে যাচ্ছে। যখন আমরা অন্য এলাকায় যাই তখন মানুষ আমাদের বানরের অনেক আলোচনা করে তখন কি আপনার গর্ব হয় না? যে লোকটাকে বানর সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সেই লোকটাও গর্ব করে৷ আমি নিজেই এর প্রমাণ।
একটু চিন্তা করে দেখুন, আমাদের আশেপাশের অন্যান্য প্রাণী গুলোর প্রতি আমাদের যে ব্যবহার এই বানর গুলোর কি আমাদের কাছ থেকে সেই ব্যবহার পাচ্ছে? অন্যান্য প্রাণী গুলো কিন্তু ঠিকি পরিপূর্ণ খাবার পাচ্ছে কিন্তু বানরগুলো? তারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিধায় বিভিন্ন দোকান বা বাড়িতে হানা দেয়! তারা যদি কুকুর বিড়ালের মত পর্যাপ্ত খাবার পেত তাহলে কখনোই আমাদের ক্ষতি করতো না। আমি বিশ্বাস করি বরমীতে যে মানুষ গুলো আছে তারা সবাই একটু একটু করে খাবার দিলে বানরের খাবারের অভাব পড়বে না। বরমীতে এতো বেশি বানর নেই যে ওদের খাবার দিতে গিয়ে আমাদের দেউলিয়া হতে হবে।
এই বানর আমাদেরকে অনেক কিছু দিয়েছে এবং দিচ্ছে। শুধু বানর দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন যায়গা থেকে অনেক পর্যটক ও দর্শনার্থী আসছে বরমীতে। এসব মানুষ বরমীতে আসায় কি আমাদের বরমীর সুনাম অর্জন হচ্ছে না? ওরা এসে আমাদের অর্থনৈতিক ভাবে একটু হলেও লাভবান করছে, এর ক্রেডিট তো এই বানরগুলোই। বরমীকে অন্যান্য এলাকায় পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য বাননের ভূমিকা অনেক বেশী কিন্তু তারা কি এর পরিপূর্ণ প্রতিদান পাচ্ছে? এই বানরগুলো অধিকার আছে বরমীবাসীর এবং সরকারের কাছ থেকে খাবার পাওয়ার কিন্তু আমরা কি তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছি না। আমরা বানর নাম দিয়ে ক্রেডিট নিচ্ছি কিন্তু তাদের প্রাপ্য তাদেরকে দিতে পারছি না বা দিচ্ছি না। আমাদের অর্থ কিংবা খাবারের প্রয়োজনে গরু ছালগ সহ অন্যান্য গৃহপালিত পশুকে খাবার দিয়ে বাচিয়ে রাখি। আর আমাদের বিনোদন ও ঐতিহ্য রক্ষায় কি এই বানরগুলোকে একটু খাবার দিতে পারি না?
প্রিয় বরমীবাসী বানরের প্রতি একটু সদয় হোন। বরমীর এই ঐতিহ্য ও এই অমূল্য সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসুন৷ গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে বানরগুলোকে একটু খাবার দেয়ার চেষ্টা করুন। খাবার অভাবে যখন কোন এক সময় বানরগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে তখন ঠিকই আফসোস করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বর্তমান প্রজন্মের অবহেলার কারণে যদি বানরগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায় তাহলে আগামী প্রজন্ম আমাদেরকে অভিশাপ দিবে আর বানরগুলোর অভিশাপ তো আছেই। অনেক কথা বলার ছিল কিন্তু কিভাবে বলতে হবে সেই ভাষা খোজে পাচ্ছি না। আমি সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি এই অমূল্য সম্পদগুলোকে দুরদুর না করে একটু আদর দিয়ে কাছে টেনে নিন। যার যেটুকু সামর্থ্য আছে সেটুকু দিয়ে সাহায্য করে এই অমূল্য সম্পদ রক্ষা করুন। সব সময় প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে না থেকে আসুন না আমরা নিজেরা যার যার যায়গা থেকে একটু সাহায্য করে আমাদের ঐতিহ্য রক্ষা করি। (খলিলুর কাদেরী)

Post a Comment

0 Comments