আজ সূর্যাস্তের পূর্বেই ইতিকাফে বসতে হবে (প্রিয় বরমী)

বরমী  সোসাইটিঃ ইতিকাফ হলো সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। ইতিকাফ আল্লাহর জন্য এক মহান ইবাদত। বান্দাহ এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। রাসূলুল্লাহ সা. সর্বদা ইতিকাফ করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম যুহরী (রহ.)-এর কথা খুবই প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘মুসলমানদের দেখে আশ্চর্য লাগে, তারা ইতিকাফ ত্যাগ করে চলেছে, অথচ নবী করিম (সা.) মদিনায় আসার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কখনো ইতিকাফ পরিত্যাগ করেননি।’ (ইবনে বাত্তাল : শরহুল বুখারী)



মসজিদ ব্যতীত ইতিকাফ শুদ্ধ নয়। পাঞ্জেগানা ও জামে মসজিদে ইতিকাফ করা শুদ্ধ। জুমার জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ ভাঙবে না। রাসূলুল্লাহ সা. রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। অনুরূপ উনার স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতেন। ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে লাইলাতুল কদর তালাশ করা। মহিলারা নিজ নিজ গৃহের নিভৃত স্থানে ইতিকাফ করতে পারেন। ইতিকাফ সম্পর্কে আল কোরআনে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, আর আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী, রুকুকারী ও সিজদাহকারীদের জন্য পবিত্র করো। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১২৫)। আর ইতিকাফের বিধান বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে : আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৮৭)।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।’ (সহিহ বুখারী : হাদিস নং ১৯২১; সহিহ মুসলিম হাদিস নং ১১৭১)

হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) মাহে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। অতঃপর তার স্ত্রীগণ তার পরবর্তীতে ইতিকাফ করেছেন। (সহিহ বুখারী : হাদিস নং ১৯২২; সহিহ মুসলিম : হাদিস নং ১১৭১)। 

আর আতা আল খুরাসানী (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘আগে বলা হতো- ইতিকাফকারীর উদাহরণ সে বান্দাহর মতো, যে নিজেকে আল্লাহর সামনে হাজির করে বলছে : হে আল্লাহ, যতক্ষণ না তুমি ক্ষমা করো আমি তোমার দরবার ত্যাগ করব না।’ (ইবনে বাত্তাল : শরহুল বুখারী : খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৮২)।

মানসিক প্রয়োজন ব্যতীত ইতিকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন- প্রস্রাব-পায়খানা অথবা পানাহার, যদি তা মসজিদে পৌঁছে দেয়ার কেউ না থাকে। অনুরূপভাবে প্রয়োজনীয় প্রত্যেক বস্তু, যা মসজিদে সম্পাদন করা সম্ভব নয়, তার জন্য বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হবে না। (আত-তামহীদ; খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩২৭, আল-মুগনী : খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬৮; শারহুল নব্বী; খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২০৮; সারহুত তাসরীব; খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৬৯)। ‘ইতিকাফকারী জরুরি প্রয়োজনে বের হলে দ্রুত হাঁটা জরুরি নয়। বরং অভ্যাস অনুযায়ী হাঁটবে। তবে প্রয়োজন শেষে দ্রুত ফিরে আসা ওয়াজিব।’ (আল মুগনী : খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৬৯)।

করোনা মহামারির কারণে গতবছর রমজানে স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে সরকার ইতিকাফে বসার ক্ষেত্রে কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করেছিল। যেহেতু এ বছরও করোনার প্রকোপ আশঙ্কাজনক, তাই ফরজে কেফায়া আদায় হয়, তেমন সংখ্যক লোক স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইতিকাফে বসা উচিত। আল্লাহ আমাদের সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করুন। (ইনকিলাব)

Post a Comment

0 Comments